স্মার্টফোন বর্তমান যুগে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। তবে উচ্চ মূল্যের ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইসগুলো সবার নাগালের মধ্যে থাকে না। সেজন্য মধ্যম বাজেটের মোবাইল ফোনগুলো ক্রেতাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। ২০২৪ সালে এসে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে অনেক ভালো ফিচার সমৃদ্ধ স্মার্টফোন পাওয়া যাচ্ছে। আজ আমরা আলোচনা করব এই বাজেট রেঞ্জে সেরা ১০টি মোবাইল ফোন সম্পর্কে।
১. শাওমি রেডমি নোট ১৩ প্রো: Redmi Note 13 Pro
- ১. শাওমি রেডমি নোট ১৩ প্রো: Redmi Note 13 Pro
- ২. রিয়েলমি ৯ প্রো প্লাস ৫জি: Realme 9 Pro Plus
- ৩. স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৫৪: Samsung Galazy A54
- ৪. পোকো এক্স৫ প্রো: Poco X5 Pro
- ৫. মোটোরোলা মোটো জি৮৪ ৫জি: Motorola Moto G84 5G
- ৬. ওপো রেনো ৮: Oppo Reno 8
- ৭. ভিভো টি২ এক্স: Vivo X2
- ৮. নোকিয়া জি৬০: Nokia G60
- ৯. টেকনো ফ্যান্টম এক্স২: Tecno Phantom X2
- ১০. ইনফিনিক্স জিরো ৫জি: Infinix Zero 5G
শাওমি তাদের রেডমি সিরিজের মাধ্যমে বরাবরই দারুণ মূল্যের বিনিময়ে উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে আসছে। রেডমি নোট ১৩ প্রো এই ঐতিহ্য বজায় রেখেছে। ৬.৬৭ ইঞ্চি অ্যামোলেড ডিসপ্লে, ১০৮ মেগাপিক্সেল ট্রিপল ক্যামেরা সেটআপ, এবং স্ন্যাপড্রাগন ৭৩২জি প্রসেসর এই ফোনটিকে এই মূল্য বিভাগে অসাধারণ করে তুলেছে। ৫০০০ এমএএইচ ব্যাটারি দীর্ঘ ব্যবহারের নিশ্চয়তা দেয়।
২. রিয়েলমি ৯ প্রো প্লাস ৫জি: Realme 9 Pro Plus
রিয়েলমি দ্রুত বাজারে নিজের অবস্থান মজবুত করছে। ৯ প্রো প্লাস ৫জি মডেলটি ৬.৬ ইঞ্চি সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লে, ডাইমেনসিটি ৯২০ চিপসেট, এবং ৬৪ মেগাপিক্সেল প্রধান ক্যামেরাসহ ট্রিপল লেন্স সেটআপ নিয়ে এসেছে। ৫০০০ এমএএইচ ব্যাটারি ৬৫ ওয়াট সুপারডার্ট চার্জিং সাপোর্ট করে।
৩. স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৫৪: Samsung Galazy A54
স্যামসাং-এর মধ্যম বাজেটের এই মডেলটি ৬.৪ ইঞ্চি সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লে, এক্সিনস ১৩৮০ চিপসেট, এবং ৬৪ মেগাপিক্সেল মূল ক্যামেরাসহ ত্রি-ক্যামেরা সেটআপ অফার করে। ৫০০০ এমএএইচ ব্যাটারি এবং ওয়াটারপ্রুফ ডিজাইন এর অন্যতম আকর্ষণ।
৪. পোকো এক্স৫ প্রো: Poco X5 Pro
পোকো ব্র্যান্ডটি শাওমির অধীনে থাকলেও নিজস্ব পরিচয় তৈরি করেছে। এক্স৫ প্রো মডেলে রয়েছে ৬.৬৭ ইঞ্চি আইপিএস এলসিডি ডিসপ্লে, স্ন্যাপড্রাগন ৭৭৮জি চিপসেট, এবং ৬৪ মেগাপিক্সেল প্রধান ক্যামেরাসহ ত্রি-ক্যামেরা সেটআপ। ৫১৬০ এমএএইচ ব্যাটারি ৬৭ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং সমর্থন করে।
৫. মোটোরোলা মোটো জি৮৪ ৫জি: Motorola Moto G84 5G
মোটোরোলার এই মডেলটি ৬.৮ ইঞ্চি আইপিএস এলসিডি ডিসপ্লে, স্ন্যাপড্রাগন ৬৯৫ প্রসেসর, এবং ৫০ মেগাপিক্সেল প্রধান ক্যামেরাসহ ত্রি-লেন্স সেটআপ নিয়ে এসেছে। ৫০০০ এমএএইচ ব্যাটারি ৩০ ওয়াট টার্বো পাওয়ার চার্জিং সাপোর্ট করে।
৬. ওপো রেনো ৮: Oppo Reno 8
ওপো রেনো সিরিজ তার স্টাইলিশ ডিজাইনের জন্য পরিচিত। রেনো ৮ মডেলে রয়েছে ৬.৪ ইঞ্চি অ্যামোলেড ডিসপ্লে, মিডিয়াটেক ডাইমেনসিটি ১৩০০ চিপসেট, এবং ৬৪ মেগাপিক্সেল মূল ক্যামেরাসহ ক্বাড ক্যামেরা সেটআপ। ৪৫০০ এমএএইচ ব্যাটারি ৩৩ ওয়াট সুপারভুক চার্জিং সমর্থন করে।
৭. ভিভো টি২ এক্স: Vivo X2
ভিভোর এই মডেলটি ৬.৫৮ ইঞ্চি অ্যামোলেড ডিসপ্লে, মিডিয়াটেক ডাইমেনসিটি ১১০০ চিপসেট, এবং ৬৪ মেগাপিক্সেল প্রধান ক্যামেরাসহ ত্রি-ক্যামেরা সেটআপ অফার করে। ৫০০০ এমএএইচ ব্যাটারি ৪৪ ওয়াট ফ্ল্যাশ চার্জ সাপোর্ট করে।
৮. নোকিয়া জি৬০: Nokia G60
নোকিয়া তার মজবুত নির্মাণ ও পরিষ্কার অ্যান্ড্রয়েড অভিজ্ঞতার জন্য পরিচিত। জি৬০ মডেলে রয়েছে ৬.৫৮ ইঞ্চি আইপিএস এলসিডি ডিসপ্লে, স্ন্যাপড্রাগন ৬৯৫ চিপসেট, এবং ৬৪ মেগাপিক্সেল মূল ক্যামেরাসহ ক্বাড ক্যামেরা সেটআপ। ৫০০০ এমএএইচ ব্যাটারি দীর্ঘ ব্যবহারের নিশ্চয়তা দেয়।
৯. টেকনো ফ্যান্টম এক্স২: Tecno Phantom X2
টেকনো ধীরে ধীরে বাজারে নিজের জায়গা করে নিচ্ছে। ফ্যান্টম এক্স২ মডেলটি ৬.৭ ইঞ্চি অ্যামোলেড ডিসপ্লে, মিডিয়াটেক হেলিও জি৯৯ চিপসেট, এবং ৬৪ মেগাপিক্সেল প্রধান ক্যামেরাসহ ক্বাড ক্যামেরা সেটআপ নিয়ে এসেছে। ৫০০০ এমএএইচ ব্যাটারি ৩৩ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং সমর্থন করে।
১০. ইনফিনিক্স জিরো ৫জি: Infinix Zero 5G
ইনফিনিক্স ব্র্যান্ডটি কম দামে ভালো ফিচার দেওয়ার জন্য পরিচিত। জিরো ৫জি মডেলে রয়েছে ৬.৭৮ ইঞ্চি আইপিএস এলসিডি ডিসপ্লে, মিডিয়াটেক ডাইমেনসিটি ৯২০ চিপসেট, এবং ৬৪ মেগাপিক্সেল মূল ক্যামেরাসহ ত্রি-ক্যামেরা সেটআপ। ৫০০০ এমএএইচ ব্যাটারি ৩৩ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং সাপোর্ট করে।
এই দশটি মোবাইল ফোন প্রত্যেকটি নিজের বৈশিষ্ট্যে অনন্য। তবে কোনটি আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত তা নির্ভর করে আপনার ব্যবহারের ধরন ও প্রয়োজনের উপর।
ক্যামেরা:
যদি আপনি ফটোগ্রাফি শখের মানুষ হন, তাহলে শাওমি রেডমি নোট ১৩ প্রো বা স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৫৪ আপনার জন্য ভালো পছন্দ হতে পারে। এই দুটি ফোনের ক্যামেরা সেটআপ অসাধারণ এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ভালো ছবি তোলার ক্ষমতা রাখে।
পারফরম্যান্স:
গেমিং বা হেভি টাস্কের জন্য পোকো এক্স৫ প্রো বা রিয়েলমি ৯ প্রো প্লাস ৫জি বেছে নিতে পারেন। এই ফোনগুলোর শক্তিশালী প্রসেসর ও র্যাম কনফিগারেশন আপনাকে স্মুথ পারফরম্যান্স দেবে।
ব্যাটারি লাইফ:
দীর্ঘ ব্যাটারি লাইফ প্রয়োজন হলে পোকো এক্স৫ প্রো বা মোটোরোলা মোটো জি৮৪ ৫জি বেছে নিতে পারেন। এই ফোনগুলোর বড় ব্যাটারি ক্ষমতা আপনাকে সারাদিন নিশ্চিন্তে ব্যবহারের সুযোগ দেবে।
ডিসপ্লে:
যদি আপনি মিডিয়া কনটেন্ট দেখতে পছন্দ করেন, তাহলে ওপো রেনো ৮ বা ভিভো টি২ এক্স-এর উজ্জ্বল ও বর্ণময় অ্যামোলেড ডিসপ্লে আপনার জন্য উপযুক্ত হতে পারে। এই ফোনগুলোর উচ্চ রিফ্রেশ রেট ডিসপ্লে স্মুথ স্ক্রোলিং এবং অ্যানিমেশন অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
৫জি সাপোর্ট:
ভবিষ্যতের প্রযুক্তির জন্য প্রস্তুত থাকতে চাইলে রিয়েলমি ৯ প্রো প্লাস ৫জি, মোটোরোলা মোটো জি৮৪ ৫জি বা ইনফিনিক্স জিরো ৫জি বেছে নিতে পারেন। এই ফোনগুলো ৫জি নেটওয়ার্ক সাপোর্ট করে, যা আপনাকে দ্রুত ইন্টারনেট গতি প্রদান করবে।
সফটওয়্যার অভিজ্ঞতা:
যদি আপনি একটি পরিষ্কার এবং আপডেটেড সফটওয়্যার অভিজ্ঞতা চান, তাহলে স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৫৪ বা নোকিয়া জি৬০ আপনার জন্য ভালো পছন্দ হতে পারে। এই ব্র্যান্ডগুলো নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট এবং সিকিউরিটি প্যাচ প্রদান করে থাকে।
ডিজাইন:
স্টাইলিশ লুক পছন্দ করলে ওপো রেনো ৮ বা ভিভো টি২ এক্স বেছে নিতে পারেন। এই ফোনগুলোর আকর্ষণীয় ডিজাইন ও রঙের বৈচিত্র্য আপনাকে আলাদা লুক দেবে।
দীর্ঘস্থায়িত্ব:
যদি আপনি একটি টেকসই ফোন চান যা দীর্ঘদিন চলবে, তাহলে নোকিয়া জি৬০ বা মোটোরোলা মোটো জি৮৪ ৫জি বেছে নিতে পারেন। এই ব্র্যান্ডগুলো তাদের মজবুত নির্মাণ ও দীর্ঘস্থায়ী পণ্যের জন্য পরিচিত।
মূল্যে বিবেচনা:
যদি আপনি সর্বোচ্চ মূল্যের বিনিময়ে সেরা ফিচার চান, তাহলে শাওমি রেডমি নোট ১৩ প্রো, পোকো এক্স৫ প্রো বা রিয়েলমি ৯ প্রো প্লাস ৫জি বেছে নিতে পারেন। এই ফোনগুলো তাদের দামের তুলনায় অনেক বেশি ফিচার অফার করে।
বিশেষ ফিচার:
কিছু ফোন বিশেষ ফিচার নিয়ে আসে যা আপনার জন্য আকর্ষণীয় হতে পারে। যেমন, স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৫৪-এর ওয়াটারপ্রুফ ডিজাইন, টেকনো ফ্যান্টম এক্স২-এর অ্যাডভান্সড কুলিং সিস্টেম, বা ইনফিনিক্স জিরো ৫জি-এর গেমিং মোড।
মনে রাখবেন, প্রযুক্তির জগতে পরিবর্তন দ্রুত আসে। তাই একটি ফোন কেনার আগে সর্বশেষ রিভিউ ও স্পেসিফিকেশন দেখে নেওয়া ভালো। এছাড়া, আপনার ব্যক্তিগত পছন্দ ও প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়াই সবচেয়ে ভালো।
২০২৪ সালে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে এই দশটি স্মার্টফোন প্রত্যেকটি নিজের মতো করে সেরা। এগুলো শুধু হাই-এন্ড ফোনের ফিচারগুলোকেই সাধ্যের মধ্যে এনে দেয়নি, বরং মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের জন্য স্মার্টফোন ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।
প্রযুক্তির এই দ্রুত অগ্রগতিতে, আগামী বছরগুলোতে আমরা আরও উন্নত ফিচার ও কম দামে ভালো স্মার্টফোন দেখতে পাব বলে আশা করা যায়। যেহেতু ৫জি প্রযুক্তি ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে, আমরা আশা করতে পারি যে আরও বেশি সংখ্যক মধ্যম বাজেটের ফোনে এই ফিচার যুক্ত হবে।
আরও পড়ুনঃ ২৫ হাজার টাকায় পিসি বিল্ড ২০২৪ | কিভাবে একটি দুর্দান্ত পিসি বিল্ড করবেন: বিস্তারিত গাইড
উপসংহারঃ
সামগ্রিকভাবে, এই বাজেটের আশেপাশে স্মার্টফোন নির্বাচনের ক্ষেত্রে ২০২৪ সাল একটি চমৎকার সময়। প্রতিটি ব্র্যান্ড তাদের সেরাটা দিতে চেষ্টা করছে, যার ফলে ক্রেতারা উপকৃত হচ্ছেন। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক ফোনটি বেছে নিলে, আপনি নিশ্চয়ই একটি দুর্দান্ত স্মার্টফোন অভিজ্ঞতা পাবেন, যা আপনার দৈনন্দিন জীবনকে আরও সহজ ও আনন্দময় করে তুলবে।